উচ্ছেদ আতঙ্কে নিজেরাই সরাচ্ছে স্থাপনা


নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার থান কাপড়ের মার্কেটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে কমপক্ষে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল একটি চক্র। তবে রক্ষা পায়নি তিন হাজারেরও বেশী অবৈধ স্থাপনা। বিশেষ করে যারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা উচ্ছেদ ঠেকানোতো দূরের কথা বর্তমানে তাদের অনেকেরই দেখা মিলছেনা। আজ বৃহস্পতিবার শহরের ২নং রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় আবারো রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হওয়ার খবরে আবারো উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে অবশিষ্ট অবৈধ দখলদারদের মধ্যে। অনেককেই নিজেদের অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে নিতে দেখা গেছে। এছাড়া উচ্ছেদ আতঙ্কে থান কাপড়ের মার্কেটের দোকানদাররা তাদের দোকানে মালামাল তুলছেন না। ওই এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে বিরাজ করছে চরম স্থবিরতা। জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন এলাকায় স্টাফ কোয়ার্টারসহ অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠা শতাধিক ছোট বড় স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তপক্ষ। ঢাকা রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের সহকারি প্রকৌশলী হামিদউল্লাহ, সার্ভেয়ার ইকবাল মাহমুদ, কনসালটেন্ট আবু বকর সিদ্দিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানে আকস্মিক স্টাফ কোয়ার্টারের ১১০টি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দারা। অনেকই বসতঘরের ভেতর থেকে ব্যবহৃত সামগ্রী সরিয়ে নিতে না পারায় সেগুলি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। তবে ১নং রেলগেট সংলগ্ন বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন মার্কেটটিও রয়েছে বহাল। বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের ভাতিজি হলেন নাসিকের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সাবেক প্যানেল মেয়র শারমিন হাবিব বিন্নি। রেললাইন থেকে ৪৫ ফুট পর্যন্ত উচ্ছেদের সীমানা হিসেবে এই মার্কেটটিও ভাঙার কথা ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই মার্কেটটিও ভাঙা হয়নি। গত ১৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নং রেলগেইট এলাকায় রেলওয়ের জমি অবৈধ ভাবে দখল করে গড়ে উঠা একটি টিনসেড আধপাকা থান কাপড়ের মার্কেট মার্কেট, রেডিমেট জামাকাপড়ের দোকান বসত ঘরসহ প্রায় আড়াই হাজার ছোট বড় স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়। তবে এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের অনুরোধে ৩দিন সময় দেয়া হয় শহরের ২নং রেল গেইট এলাকার মনির রেস্তোরা সংলগ্ন ১০টি দোকান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, শহরের ২নং রেলগেট এলাকা থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত থান কাপড় মার্কেটে কমপক্ষে হাজার দোকান রয়েছে। গত ১৬ ১৭ অক্টোবর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পূর্বে উচ্ছেদ অভিযান ঠেকানোর কথা বলেন এসকল দোকানদারদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর বুধবার দুপুরে রেলমন্ত্রী মো: নুরুল ইসলাম সুজন নারায়ণগঞ্জে পরিদর্শনে আসলেও রেলওয়ে কতটুকু জায়গা উচ্ছেদ করবে সেটা নিয়ে রয়ে গেছে ধোয়াশা। কারণ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুরুতে রেললাইনের দক্ষিণপাশে ৪৫ ফুট পর্যন্ত লাল দাগ দিয়ে গেলেও কোথাও কোথাও ২৫ ফুট আবার কোথাও কোথাও ৭০ ফুট পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলেছিল। অবশিষ্ট থান কাপড়ের মার্কেটের দোকানগুলো ভাঙা হবে কিনা সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে দোকানদারদের কাছ থেকে কমপক্ষে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও ওই চক্রটি রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দর কষাকষি চললেও শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি বলে জানা গেছে। যে কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রটির অনেকেই বর্তমানে লাপাত্তা রয়েছে। এদিকে গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার আবারো থান কাপড় মার্কেট এলাকায় রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হওয়ার খবরে উকিলপাড়া থেকে ২নং রেলগেট পর্যন্ত উচ্ছেদকৃত এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। রেললাইনের দক্ষিণ পাশে ৪৫ ফুট দোকানপাটসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশী করেছে। তবে থান কাপড়ের মার্কেটের বাকী অবৈধ স্থাপনাগুলো কি বহাল থাকবে নাকি উচ্ছেদ করা হবে সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা পায়নি দোকানদাররা। গত ১৭ অক্টোবর উচ্ছেদের কয়েকদিন পরে ধ্বংসস্তুপে পরিণত নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয়ার কাজ করে বেশ কিছু নির্মাণ শ্রমিক। ব্যবসায়ীরা আবারো ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু আবারো সেখানে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার আবারো ওই এলাকায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন এমন গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। উকিলপাড়া থেকে গলাচিপা পর্যন্ত বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা নিজেরাই সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া উকিলপাড়া এলাকায় উচ্ছেদকৃত অংশে অস্থায়ীভাবে দোকানও খুলে বসতে দেখা গেছে কিছু ব্যবসায়ীকে।  বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে। অবশিষ্ট অবৈধ স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করবো।

Post a Comment

0 Comments